info@manusher.org

latest stories

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবে জেন্ডার সমতা

News

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবে জেন্ডার সমতা

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে এমজেএফ টাওয়ারের আলোক অডিটোরিয়ামে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড জেন্ডার ইমপ্যাক্ট শীর্ষক গবেষণা ফলাফল আলোচনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি প্রজেক্টের আওতায় এমজেএফের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে ইন্সপাইরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসালটিং লিমিটেড। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় ইন্সপাইরার পরিচালক সালমান রহমান বলেন, ‘প্রথাগতভাবে এ দেশে নারীরাই মূলত বাড়ির রান্নার কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। জ্বালানি সংক্রান্ত সরকারি কোনো নীতিমালা বা পরিকল্পনাতেও নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকায় জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।’

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ৩৬ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার এবং বাংলাদেশ ও একই ধরনের অর্থনীতির চারটি দেশ ও এই খাতে এগিয়ে থাকা আরও চার দেশের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গবেষণা ফলাফল তৈরি হয়েছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত নীতিমালার মূল স্রোতধারায় জেন্ডার সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নারীর ক্ষমতায়ন ও জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।

গবেষক সালমান তার উপস্থাপনায় জানান, পর্যাপ্ত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে এবং জেন্ডার বৈষম্যের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারণী অবস্থানে নারীরা পৌঁছাতে পারছে না। এতে জেন্ডার বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে তৃণমূল পর্যায়ের নারীরাও শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকারী হিসেবে নয়, টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণার আলোকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৩ এবং সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ২০২২ এখনও খসড়া পর্যায়ে আছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি লক্ষ্য জেন্ডার সমতা অর্জনের জন্য এই দুই নীতিমালায় নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিতভাবে যুক্ত করা প্রয়োজন। তবে শুধু নীতিমালায় সংযোজনই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন।

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে একই সঙ্গে যেমন নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে, গৃহস্থালি কাজের সময় বাঁচবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে তেমনি ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সহজ হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি।

প্রধান অতিথি বলেন, ‘দেশে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দশ বছর আগেও ভাবা হয়নি আমাদের এত বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। গ্রামাঞ্চলেও এখন অনেকে এসি, রাইস কুকার ইত্যাদি যন্ত্রাদি ব্যবহার করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এনার্জি ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে যেভাবে কাজ করেছেন, বিশ্বের অনেক সরকারপ্রধানই তা করেননি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। প্রায় ৩৩টি নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। আমাদের সোলার, উইন্ড পাওয়ার আছে। একটি হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্টও আছে।’

তিনি বলেন, ‘কপ সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে যুদ্ধের জন্য প্রচুর বরাদ্দ দেয়া হয়, কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে একটি ক্লাইমেট ফান্ড করেছে। আমাদের দেশে কার্বন নিঃসরণ খুব কম হলেও আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছি, যেন আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। স্টেম এডুকেশনে আগ্রহী করার জন্য নারীদের মেন্টরশিপের প্রয়োজন। সারা পৃথিবীতে রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টরে মাত্র ৩২ ভাগ নারী আছে। আমাদের পুরো লেবার ফোর্সে এখন ৪০ শতাংশ নারী আছেন। নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জিডিপিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান বাস্তবায়নের ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রতি বছর সব মন্ত্রণালয় যেভাবে নারীদের উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে তাতেও অংশগ্রহণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে আরো গবেষণা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন যে কীভাবে নারীদের অংশগ্রহণ ও জীবনযাত্রার মান বাড়ানো যায়। নারীদের জীবনমানের উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’

এই অনুষ্ঠানে আলোচকদের মধ্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করায় নারী-পুরুষ সবার ওপরই ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তা ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ দিন দিন বাড়ছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির কমছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে এটি সবাইকে লাভবান করবে।’

২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ২০২২ সমন্বয় করার আহ্বান জানান ড. মোয়াজ্জেম।

নীতিনির্ধারণী জায়গায় মূলত পুরুষরা থাকায় পুরো সেক্টরেই এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। তিনি বলেন, ‘নীতিমালা তৈরির সময় জেন্ডার লেন্স থেকে বিষয়টি দেখতে হবে। নারীদের মধ্যেও নানা ভাগ আছে যেমন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, চাকরিজীবী, গৃহিণী, প্রবীণ ইত্যাদি। সবার সুবিধার বিষয় বিবেচনা করেই নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক খাত হওয়ায় পুরুষদের ওপরও কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই পুরুষদের স্বার্থেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন।’

a2i এর জেন্ডার স্পেশালিস্ট নাহিদ শারমিন বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন তাহলে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। সেই সঙ্গে তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে।’

অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণত তেমন আলোচনা হয় না। অথচ গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি ব্যবহারের সঙ্গে মূলত নারীরাই জড়িত। নবায়নযোগ্য জ্বালানিই আমাদের ভবিষ্যত। এই খাতে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং নারীদের কথা মাথায় রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

code

Get Involved

Photo Gallery

Get involved with MJF