info@manusher.org

latest stories

নৃগোষ্ঠী জনগণের জন্য বাজেট: বিশেষ অর্থনৈতিক প্রণোদনা সহায়তা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ দাবী

Press Release

২ মে, রবিবার, ২০২১: করোনার কারণে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নৃগোষ্ঠী জনগণের জন্য আগামী বছরের বাজেটে বিশেষ অর্থনৈতিক প্রণোদনা সহায়তা প্রদান এবং উন্নয়ন কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য এই জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট অর্থর্ বরাদ্দ থাকা খুব জরুরি বলে মনে করেন নৃগোষ্ঠী নেতৃবৃন্দ।

তারা বলেছেন, এবারের জাতীয় বাজেটে অতীতের মতো ”পৃথক অনু”েছদ যুক্ত” করে নৃগোষ্ঠী উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে এবং বাজেট বক্তৃতা ছোট হলেও একটি প্যারাগ্রাফে নৃগোষ্ঠী বিষয়ে বিবরণী থাকতে হবে। উল্লেখ্য, বিগত বাজেটগুলোতে (২০১০ থেকে ২০১৩) বাজেট বক্তৃতায় নৃগোষ্ঠী জনগণের জন্য ছোট্ট পৃথক অনু”েছদ থাকলেও, গত কয়েকটি বাজেট বক্তৃতায় নৃগোষ্ঠীর ¯’ান হয়নি।

তারা বলেন, আমরা এবার আশা করবো চলতি বাজেট বক্তৃতায় আদিবাসী মানুষের পরিচয়, অধিকার, সংস্কৃতি, নিজস্ব জীবনধারা, তাদের উন্নয়ন এসব বিষয়ে কিছু উল্লেখ থাকবে। বাজেট মানে তো শুধু টাকা পয়সা না, এখানে আদিবাসী প্রান্তিক মানুষ সম্পর্কে রাষ্ট্রের ভাবনা-চিন্তা, সমর্থন ও দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রকাশ ঘটে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত” নৃগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এই দাবী জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপ¯ি’ত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। ” জাতীয় বাজেট ও আদিবাসী” বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপণ করেন নৃগোষ্ঠী নেতা সঞ্জীব দ্রং।

মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, গত জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছিল, সেখানে বরাবরের মতো দেশের ৪০ লক্ষাধিক নৃগোষ্ঠী জনগণ উপেক্ষিতই ছিল।

অবশ্য সমতলের আদিবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে প্রতিবছর “বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা” নামে যে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এই ধরনের স্বতন্ত্র, সুনির্দিষ্ট ও সরাসরি বাজেট বরাদ্দ রাখা খুব প্রয়োজনীয় হলেও এই বরাদ্দ তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে আরো বেশি হওয়া উচিত।

বাজেটে নৃগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ কী পরিমাণ হবে, তা নির্ধারণের জন্য বড় সমস্যা হলো, নৃগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা নিরূপিত না হওয়া এবং প্রকৃত জনসংখ্যা কত, তা না জানা। সরকারের কাছে যে তথ্য আছে তা হলো ২০১১ সালের লোকগণনা অনুযায়ী ২৭টি নৃগোষ্ঠী (প্রকৃতপক্ষে ২৪টি) বা তালিকার ১৬ লাখ জনসংখ্যা।

অথচ ২০১৯ সালে মার্চ মাসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করেছে ৫০টি আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠী তালিকা। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ২০১১ সালের লোকগণনায় অর্ধেকের বেশি জাতি বাদ পড়েছে এবং সেই সংখ্যায় অনেক ভুলভ্রান্তি রয়েছে।

বাজেট সাধারণত বরাদ্দ হয় মন্ত্রণালয়ভিত্তিক। যেহেতু সমতলের নৃগোষ্ঠী মানুষের জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই, তাই বাজেট বরাদ্দও আলাদাভাবে নেই। আদিবাসীদের জন্য উন্নয়নমূলক বরাদ্দ মূলত সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি কর্মসূচির মাধ্যমে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কিভাবে এই বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে আদিবাসী প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা এবং এজন্য একটি ইনক্লুসিভ ম্যাকানিজম থাকা।

মূল প্রবন্ধে আরো বলা হয়, আদিবাসীদের উন্নয়নের ধারায় আনতে হলে, এসডিজি’র লক্ষ্য পূরণ করতে হলে জাতীয় বাজেটে পৃথকভাবে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। ¯’ানীয় পর্যায়ে আদিবাসী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নেই বলেই বহুকাল ধরে নৃগোষ্ঠী জীবনে জাতীয় বাজেট বরাদ্দ বা ব্যাপক উন্নয়নের অর্থপূর্ণ প্রতিফলনও নেই। তারা ভূমিহীন, দেশান্তরী মজুর, শিক্ষায় পিছনে, খাওয়ার পানি, সেচের জন্য পানি পাওয়ার ক্ষেত্রেও বঞ্চিত। গত কয়েক বছর ধরে সরকার সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন ও আলাদা করে বাজেট বরাদ্দ রেখেছেন। কিš‘ তুলনামূলক বিচারে নৃগোষ্ঠীর মানুষ বরাবরের মতো উপেক্ষিত।

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দারিদ্রের হার বেড়ে গিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশের উপরে উঠে গেছে। রাঙ্গামাটি আর বান্দরবানে এই দারিদ্রের হার যথাক্রমে ৬৪ শতাংশ এবং ৬৩ শতাংশ। সমতল অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা দিনাজপুরে এই হার ৬৪.৩ শতাংশ। আদিবাসীদের মাথাপিছু আয় জাতীয় গড় আয় থেকেও অনেক কম। পাহাড়ের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে যা ২৬ শতাংশ কম, সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ কম। সমতলের দুই-তৃতীয়াংশ আদিবাসী কার্যত ভূমিহীন (আদিবাসী নেভিগেটর, আইএলও এবং কাপেং ফাউন্ডেশন ২০১৯)।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১,১৯৪ কোটি টাকা। গত বছর ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে বাজেট ছিল ১,২৩৫ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ পার্বত্য মন্ত্রণালয়সহ পাহাড়ের সকলের জন্য প্রযোজ্য হলেও আঞ্চলিক পরিষদকে তাদের বরাদ্দের জন্য মুখ চেয়ে থাকতে হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিকে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপমা দেওয়ান, চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ হামিদা বানু বেগম, পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ এমপি এবং রাশেদ খান মেনন এমপি। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন মানুষের জন্য ফাউডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

আলোচনায় উঠে আসে যে, সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনি খাতে দিন দিন বাজেট বাড়লেও সামাজিক সুরক্ষার এই বাজেটে নৃগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে বা অগ্রাধিকার দিয়ে কোন নির্দেশনা নেই। আলোচনা অনুষ্ঠানে আগত নেতৃবৃন্দ দাবি জানান যে এই খাতে বরাদ্দ দেয়ার সময় নৃগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা থাকা জরুরি। এই নীতিমালা না থাকা এবং আদিবাসীদের উল্লেখ না থাকার কারণে বিগত বছরগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী: ভিজিএফ, ভিজিডি, এফএফই, কাবিখা, কাবিটা ইত্যাদি খাতগুলোতে নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বা অভিগম্যতা খুব কম।

মূল প্রবন্ধে সুপারিশমালায় উঠে এসেছে যে সমতলের বিষয়টি বিষয়টি দেখার জন্য যেহেতু এখন পর্যন্ত কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই, সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের থোক বরাদ্দ পরিচালনার জন্য সমতলের আদিবাসীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি বা বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। এতে দুর্নীতি রোধসহ এই তহবিলের অপচয় রোধ হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদসমূহের বাজেট বৃদ্ধি করা। এছাড়াও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নৃ-গোষ্ঠী জনগণের জন্য অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নৃগোষ্ঠী সমন্বয়ে উ”চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা।

শাহানা হুদা রঞ্জনা
সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর
০১৭১১৮৪৬৪৮০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

code

Get Involved

Photo Gallery

Get involved with MJF