info@manusher.org

latest stories

মে মাসে ১৩,৪৯৪ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকারএরমধ্যে ৪১৬০ জন প্রথম সহিংসতার শিকার

Press Release

ঢাকা, ১০ জুন, ২০২০: লকডাউন চলাকালে গত মে মাসের ৩১ দিনে দেশের ৫৩ টি জেলায় ১৩,৪৯৪ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪১৬০ জন নারী ও শিশু এর আগে কখনোই সহিংসতার শিকার হননি। নারী ও শিশুর উপর নির্যাতনের হার বেড়েছে শতকরা ৩১ ভাগ।
পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুরা কেমন আছে তা জানার জন্য মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) গত মে মাসে তার কর্মএলাকার মোট ৫৩,৩৪০ জন নারী ও শিশুর সাথে ফোনে কথা বলে এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। অনেক চ্যালেঞ্জ এর ভেতরে থেকেও ৩৭,৪৩৪ জন নারী ও ১৫,৯০৬ জন শিশু কথা বলেছে। শিশুদের সবাই কিশোর কিশোরী।
নতুনভাবে সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুর মধ্যে ১৩১৯ জন শিশু অর্থাৎ শতকরা ৬১ জন শিশু এবং ২৮৪১ জন নারী অর্থাৎ শতকরা ২৫ ভাগ নারী। এর মানে দাঁড়ালো প্রতি ১০ জনে ৬ জন শিশু নতুন আক্রান্ত। প্রতি ৪ জন নারীর মধ্যে ১ জনেরও বেশি নতুন আক্রান্ত।
আজ এমজেএফ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য তুলে ধরে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপণ করেন এমজেএফ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মোট নিপীড়িত ১১,৩২৩ জন নারীর মধ্যে ১১,০২৫ জন অর্থাৎ শতকরা ৯৭.৪ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে স্বামীর হাতে।
এই পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি নারী ৪৯৪৭ জন বা শতকরা ৪৫ ভাগ। এরপর অর্থনৈতিক ৩৫৮৯ জন বা শতকরা ৩৩ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০৮৫ জন বা ১৯ শতাংশ এবং যৌন নিপীড়ণের শিকার ৪০৪ জন বা শতকরা ৪ ভাগ। এছাড়াও আছে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি, হত্যা। ত্রাণ নিতে গিয়েও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন নারী।
এপ্রিলের উপাত্তের কথা উল্লেখ করে শাহীন আনাম বলেন নারীর ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের হার বেড়ে চলার এই হার খুব ভয়াবহ । তিনি সরকারকে অন্যসব জরুরি অবস্থার পাশাপাশি নারীদের নিরাপত্তার প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দিতে আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন এমজেএফ এর নলেজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ড. রিজওয়ান উল আলম ।

এর আগে গত এপ্রিল মাসেও এমজেএফ তাদেও সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় পারিবারিক ও অন্যান্য ধরণের সহিংসতা নিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে । এপ্রিলে দেশের ২৭ টি জেলায় ৪৭০৫ জন নারী ও শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০৫১ জন নারী ও শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ জন তাদের বাবা মা ও আত্মীয়দের দ্বারা এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে ।
মে মাসে ২১৭১ জন শিশু নানাধরণের সহিংসতার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১৬২১ টি শিশু বা শতকরা ৭৫ জন পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এছাড়া বাল্যবিয়ে, কাজের জায়গায় সহিংসতা, অপহরণ, হত্যা ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির চেষ্টার শিকার হয়েছে। নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে ১৪৭৭ জন বা শতকরা ৬৮জন মেয়ে এবং ৬৯৪ জন বা শতকরা ৩২ জন ছেলে। মেয়েশিশুদের মধ্যে ১০১৩ জন বা শতকরা ৬২.৫ মেয়ে শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। ১৭০ জনের বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে এবং ২৩৩ টি বাল্যবিয়ে থামানো গেছে।
১৯ টি শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৬ জনই মেয়েশিশু। ২১ টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ১৯ টি মেয়ে বাকি দুজন ছেলে। ১৩ টি মেয়েশিশু ও ৬টি ছেলে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ত্রাণ আনতে গিয়ে ৩টি মেয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এমজেএফ এই তরিৎ জরিপটি করিয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা ও অন্যান্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে ।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে বিশে^র অনেকগুলো রাষ্ট্রে এই লকডাউনের সময়ে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে যেমন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, চীন, মালয়শিয়া, ভারত, আর্জেন্টিনা এবং তিউনেশিয়া। আগে যেখানে প্রতি তিনজনে একজন নারী সহিংসতার শিকার হতো, সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন কোন রাষ্ট্রে প্রতি তিনজনে দুজন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে যেহেতু নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বেড়ে গিয়েছে তাই অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং তাদের সহিংসতা মুক্ত রাখার জন্য দ্রুত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয় । এর মধ্যে রয়েছে- যে হেল্প লাইনগুলো নারীদের সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করে থাকে সেগুলো আরও কার্যকর রাখা। যেমন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে-১০৯ ও পুলিশের সহায়তা জন্য-৯৯৯। যেন সহিংসতার শিকার নারীরা ফোন করার সাথে সাথে তাদের সহায়তা পেয়ে যায়। সেইসাথে যেসব কিশোর কিশোরীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে করোনার কারণে, তারা যেন আবার ফিওে আসতে পাওে, সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার।
অনেক নারীকে সহিংসতার কারণে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে হচ্ছে বা বের করে দেওয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে সেই নারীর আশ্রয় প্রয়োজন। তাই সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা যাতে আশ্রয় পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ভার্চুয়াল আদালত ও নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল এর কার্যক্রম আরো গেবান করার অনুলোধ জানিয়েছে এমজেএফ।

শাহানা হুদা রঞ্জনা
সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন
০১৭১১৮৪৬৪৮০
ইমেইল : ranjana@manusher.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

code

Get Involved

Photo Gallery

Get involved with MJF