info@manusher.org

latest stories

সরকার কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার উপর গুরুত্ব দিলেও আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে

Press Release

সরকার কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবার উপর গুরুত্ব দিলেও আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে

ঢাকা, মার্চ, ২০২১: কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরেও ২০১৯/২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে বরিশাল বিভাগে ২০১৯ সালে ২৩৯ জন কিশোর ও ১৬২৮ জন কিশোরী এবং ২০২০ সালে ৩১২ জন কিশোর ও ১৪০০ জন কিশোরী এই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে।

জেলাওয়ারি  হিসাবে দেখা গেছে পটুয়াখালি ও বরগুনাতে এই দুইবছর কিশোর বা কিশোরীরা কোন সেবা গ্রহণ করেনি। সংখ্যায় কম হলেও ঝালকাঠি জেলার কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে এই দুইবছরে। আর সংখ্যায় খুবই কম হওয়া সত্তে¡ও বরিশাল বিভাগে কিশোররা অন্য বিভাগের কিশোরদের চাইতে বেশি সেবা গ্রহণ করেছে। ভোলাতে দেখা গেছে কিশোরদের সেবা গ্রহণের হার একদম শূন্য।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত “বর্তমান পরিস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার” বিষয়ক ওয়েবিনারের এই তথ্যগুলো উঠে এসেছে।

সরকার কৈশোর বান্ধব ষ¦াস্থ্যসেবার উপর গুরুত্ব দিলেও কেন আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৭-২০২২ কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অপারেশন প্ল্যানে বাল্যবিয়ে, কৈশোরকালীন মাতৃত্ব, নারীর প্রতি সহিংসতা, ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা ও পুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প থাকলেও, বাবা-মা, অভিভাবক, স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় গুরু, সমাজকর্মী, স্থানীয় মতমোড়ল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামান না। অথচ এবিষয়ে তাদেরই সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়ার কথা বলা হচ্ছে বারবার।

কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার বর্তমান মান খুবই নাজুক। এই পর্যায়ে সেবাদানকারীদের অনুপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। পাশাপাশি কৈশোর বান্ধব সেবা কেন্দ্রের সেবা সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই বা তাদের সেভাবে জানানোও হয়না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অভাব রয়েছে। কিশোর-কিশোরীরা সেবা গ্রহণের সময় সেবাদানকারীর কক্ষের বাইরে অযাচিতভাবে মানুষ উঁিকঝুঁকি দেয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  ড. মোহাম্মদ শরীফ (এমসিএইচ), লাইন ডিরেক্টর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, স¦াস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ওয়েবিনারটিতে কিশোর-কিশোরীরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে।

প্রধান অতিথি ডা. দীপু মনি তার বক্তব্যে বলেন, কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতা সৃষ্টি করার দায়িত্ব ভভিভাবক, শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। বয়:সন্ধিকালের শিশুরা বাবা-মা অথবা তাদের শিক্ষকদের সাথে নিরাপদ যৌন জীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন কোন কথা বলেনা। অন্যদিকে অভিভাবকরাও বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করেন না। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। স্কুল পর্যায়ে কাউনসিলিং দেয়ার জন্য খুব শীঘ্রই ২ লাখ শিক্ষক কাজ শুরু করবেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে খুব যতœ নিয়ে বা গুরুত্ব দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের বিশেষ করে কিশোরদের ও অবিবাহিতা কিশোরীদের সাথে কথা বলা হয়না। বিদ্যালয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী চলছে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোও সময়মত খুলে না। তবে এর জন্য কারো কোন জবাবদিহিতা নেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০১৮) সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৭৭ লক্ষ কিশোর-কিশোরী। কৈশোরকালে মন ও দেহের যে বৃদ্ধি ঘটে, সেই পরিবর্তনের সাথে বয়:সন্ধিকালে পৌঁছানো শিশু-কিশোরদের মনো-দৈহিক ও মনো-সামাজিক, আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। একই সাথে এই বয়সটা তাদের জন্য খুব সম্ভবনার সময়। এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তারা বয়:প্রাপ্ত হয় এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ভার গ্রহণ করে।

”কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা” বিষয়ে তথ্য উপস্থাপণ করেছেন নারীপক্ষের সদস্য ও নারীর স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্ব্য বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরিন। বিষয়ের উপর বক্তব্য রেখেছেন বাংলা একাডেমি ফেলো অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ড.সাবিনা ফাইজ এবং পিপিআরসি’র কথা রিসার্চ এসোসিয়েটের পরিচালক উমামা জিল্লুর। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান শাহীন আনাম।

আজকের আলোচনায় উঠে এসেছে যে বয়:সন্ধিকালে শিশু-কিশোরদের নিজের দেহ ও মন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে। আর এই প্রশ্নের সঠিক জবাব না পেলে বিভ্রান্তি থেকে নানারকম ক্ষতি হতে পারে। একজন শিশু যখন বয়:সন্ধিকালে পৌঁছে, তখন সেই শিশুর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। ছেলেমেয়েরা যদি এই বয়সটাতে বয়:সন্ধিকালের জন্য সংবেদনশীল নীতিমালা ও সুবিধাদি পায়, তাহলে তারা অনেক সমস্যার সমাধান নিজেরাই করতে পারবে। অবশ্য বাংলাদেশে বয়:সন্ধিকাল খুব পরিচিত কোন ধারণা নয়।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কিশোর-কিশোরী বক্তারা বলেছেন আমরা তারা অর্থাৎ এই ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে থাকা শিশুরা এমন একটা কমিউনিটি বা গোষ্ঠীর মধ্যে বসবাস করে, যারা সনাতনী ধ্যানধারণা বিশ^াস করে ও চর্চা করে। পরিবার ও সমাজ যৌন জীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কোন আলোচনাকে গ্রহণ করে না। বরং এই বিষয়ক আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনো ঠেকানোর চেষ্টা করে থাকে। এসময়টাতে তাদের অনেক পরিবর্তন হয় শরীরে, বুদ্ধিতে ও মনে। অথচ কারো সাথে শেয়ার করা যায়না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

code

Get Involved

Photo Gallery

Get involved with MJF