info@manusher.org

latest stories

চলমান লকডাউনে এপ্রিল মাসে ৪২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার: এমজেএফ

Press Release

ঢাকা, ৬ মে, ২০২০ : চলমান লকডাউনে এপ্রিল মাস  জুড়ে ২৭টি জেলায় ৪২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ জন শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ জন তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা এই নির্যাতিত হয়েছে ।

করোনা-জনিত লকডাউন  পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নারী ও শিশুরা কেমন আছে তা জানতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ( এমজেএফ) তার কর্মএলাকার  নারী ও শিশুদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে এই তথ্য সংগ্রহ করেছে।এমজেএফের দুইটি প্রকল্পের ২৪ টি সহযোগী সংগঠন ২৭ টি জেলার ৫৮ উপজেলার ৬০২টি গ্রাম ও ৪ টি সিটি কর্পোরেশনের ১৭২০৩ জন নারী ও শিশুদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এপ্রিল মাসে সংঘটিত সহিংসতা ও নির্যাতনের এই ভয়াবহ তথ্য উদ্ঘাটন করেছে।

আজ ঢাকায় এক জুম সংবাদ-সম্মেলনে এমজেএফ নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপন করে| সংবাদ সম্মেলনে পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন: গৃহে আবদ্ধ থাকার কারণে নারীরা তাদের পরিস্থিতি বলতে পারছেন না। আবার অনেককে উদ্ধার করার চেষ্টা করা হলেও করোনার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা মিলছে না। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা সাহায্য করলেও অনেকসময় স্বামীদের অনুরোধে মীমাংসা করে দিচ্ছেন।

সংবাদ-সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এমজেএফের পরিচালক রিনা রায় এবং সহযোগী সংস্থার তিনজন নির্বাহী পরিচালক|জরিপের সারাংশ উপস্থাপন করেন এমজেএফের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস|

লকডাউনের সময় টেলিফোনের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের কাছ থেকে পারিবারিক সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ সত্যিকার অর্থেই চ্যালেঞ্জিং ও কষ্টসাধ্য ছিল। জরিপের তথ্য অনুযায়ী স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৪৮  নারী, মানসিক নির্যাতনের শিকার ২০০৮, যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৫ জন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৩০৮ জন নারী। এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন নারী, হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে এবং যৌন হয়রানি করা হয়েছে ২০ জন নারীকে।

উত্তরদাতা ৪২৫৯ শিশুর মধ্যে ৪২৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর বাইরে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৩৩ টি এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪২ টি|  এর মধ্যে ৪জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৬ জনকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়, অপহৃত  হয়েছে ২ জন, যৌন হয়রানির শিকার ১০ জন এবং রিলিফ নেয়ার সময় ১০ শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ।

করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা ও অনান্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে ইউকেএইডের সহায়তায় নারী ও শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তা (সিকিউরিটি এন্ড রাইটস অব উম্যান এন্ড গার্লস) এবং সুইডিশ সিডার সহায়তায় জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধ (কমবেটিং জেন্ডার বেইসড ভায়োলেন্স ) এবং এমজেএফ কর্তৃক পরিচালিত  উক্ত কর্মসূচিদ্বয়ের আওতায় এই তরিৎ জরিপটি সম্পন্ন হয়| উল্লেখ্য, লকডাউন পরিস্থিতিতে যে নারী আগে কখনই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়নি সেও সহিংসতার শিকার হচ্ছে| বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী লকডাউন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, চীন, মালয়শিয়া, ভারত, আর্জেন্টিনা এবং তিউনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে| আগে যেখানে প্রতি তিনজনে একজন নারী সহিংসতার শিকার হতো, সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন কোন রাষ্ট্রে প্রতি তিনজনে দুজন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

এমজেএফ পুরো এপ্রিল মাসে সহিংসতার শিকার ২২০২ জন নারী ও শিশুকে কাউন্সিালং, আইনগত সহায়তা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছে। ২০০০ জন নারী ও শিশুকে যারা নিয়মিতভাবে সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের ফলোআপ করেছে, যেন সে আবার সহিংসতার শিকার না হয়। সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় বাল্যবিয়ে বন্ধ ১৪১টি বাল্যবিবাহ নিরোধ করা হয়েছে।

লকডাউন পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এমজেএফ সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিস্ট কিছু সুপারিশ উত্থাপন করে| এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: যে হেল্প লাইনগুলো নারীদের সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করে থাকে যেমন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে-১০৯ ও পুলিশের সহায়তা জন্য-৯৯৯, সেগুলো আরও কার্যকর রাখা, যেন সহিংসতার শিকার নারীরা ফোন করার সাথে সাথে তাদের সহায়তা পেয়ে যায়।

অনেক নারীকে সহিংসতার কারণে ঘর থেকে বের হয়ে  যেতে হচ্ছে বা বের করে দেওয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে সেই নারীর আশ্রয় প্রয়োজন। তাই সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা যাতে আশ্রয় পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। কারণ কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে বা ফোন করে স্থান পাচ্ছেনা। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং করোনা পরিস্থিতিতেও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল এর কার্যত্রæম চলমান রাখাার জন্য “ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স দ্রুত মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সমাপ্ত//

 

বার্তা-প্রেরক:

শাহানা হুদা রঞ্জনা

সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন

০১৭১১৮৪৬৪৮০

ইমেইল: ranjana@manusher.org

 

 

 

Bangla newspaper coverage

 

 

Online coverage

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

code

Get Involved

Photo Gallery

Get involved with MJF