ঢাকা, ১৭ আগষ্ট, ২০২০: করোনা মহামারিজনিত সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করায় বেড়েছে কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার। জুনের তুলনায় জুলাই মাসে কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার শতকরা ১৩৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ( এমজেএফ) এর তড়িৎ টেলিফোন জরিপে বেরিয়ে এসেছে।জুলাইতে ৬৯২ জন শিশু কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জুনে এই সংখ্যা ছিল ২৯২ জন। অন্যদিকে কমে এসেছে পারিবারিক নির্যাতনের হার।
এছাড়া শিশু অপহরণের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।৬৯ জন শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। মোট ২৯৭৯ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে মেয়েশিশু ১৯৭৯ জন অর্থাৎ ৬৬ শতকরা জন এবং ছেলেশিশু ১০০০ জন, শতকরা হার ৩৪ জন।
কেন ছুটি শেষ হওয়ার পর কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার বাড়লো এপ্রসঙ্গে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে অধিক সংখ্যক শিশু কাজে যোগ দিয়েছে। অনেকদিন ধরে পুরো পরিবার বেকার থাকায় বহু পরিবার বেশি সংখ্যায় সন্তানদের কাজে পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অচলাবস্থার কারণে মালিকরা অল্প টাকায় শিশু শ্রমিক রাখার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এছাড়া দেশে স্কুল এখনো বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা শিশুদের দিয়ে আয় করানোর পক্ষে।
পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুরা কেমন আছে তা জানার জন্য ৫৩ টা জেলার ১১১টি সহযোগী সংগঠনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জুলাই মাসে। কথা বলা হয়েছে মোট ৬৩,৯৬৮ জন নারী ও শিশুর সাথে।
এরমধ্যে নারী ৪৪,৮৭৫ জন ও শিশু ১৯০৯৩ জন। জুলাইতে নারী ও শিশু মিলিয়ে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ১১,৪৭১ জন। জুন মাসে যা ছিল ১২,৭৪০ জন। নারী নির্যাতিতের সংখ্যা ৮৪৯২ জন, যা জুন মাসে ছিল ৯৮৪৪ জন। সেখানে শিশুর সংখ্যা জুলাইতে বেড়ে গিয়ে হয়েছে ২৯৭৯ জন, জুনে যা ছিল ২৮৯৬। নতুন আক্রান্ত নারী ও শিশুর সংখ্যা মোট ৩৮৯৯ জন। এরমধ্যে নারী ৩২৯৩ জন বা শতকরা ৩৯ জন এবং শিশু ৬০৬ জন শতকরা ২০ ভাগ।
৮৩৮৯ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যা শতকরা হার ৯৪.৮ জন। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৬ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে ১৯ জন নারীকে, হত্যা করা হয়েছে ১১ জনকে এবং খাবার ও সাহায্য আনতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ জন।
শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হলেও বাল্যবিয়ের হার আগের চেয়ে কমে গিয়ে হয়েছে ১৭৪। এছাড়া ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে শিশুরা।
পারিবারিক নির্যাতনের আওতায় মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ৪০০০ জন নারী, অর্থনৈতিক নিপীড়ণের শিকার ২৭৭১ জন, শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল ১৫৪৬ জনের উপর। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২০০ নারী।
জুলাইয়ের উপাত্তের কথা উল্লেখ করে এমজেএফ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন কর্মক্ষেত্রে শিশুর প্রতি নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়ার এই হার খুব ভয়াবহ। তিনি সরকারকে অন্যসব জরুরি অবস্থার পাশাপাশি শিশুদের নিরাপত্তার প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দিতে আহŸান জানান। এমজেএফ এর আগে গত এপ্রিল, মে, জুন মাসেও তাদের সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় পারিবারিক ও অন্যান্য ধরণের সহিংসতা নিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে। এমজেএফ এই তরিৎ জরিপটি করিয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা ও অন্যান্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে ।
সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে গেলেও অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি নারী ও শিশুর ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং তাদের সহিংসতা মুক্ত রাখার জন্য দ্রæত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার জন্য আহŸান জানিয়েছে এমজেএফ। এর মধ্যে রয়েছে- যে হেল্প লাইনগুলো নারীদের সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করে থাকে সেগুলো আরও কার্যকর রাখা। যেমন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে-১০৯ ও পুলিশের সহায়তা জন্য-৯৯৯। যেন সহিংসতার শিকার নারীরা ফোন করার সাথে সাথে তাদের সহায়তা পেয়ে যায়।
শাহানা হুদা রঞ্জনা
সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন
০১৭১১৮৪৬৪৮০
ইমেইল ranjana@manusher.org
Leave a Reply