ঢাকা, ১৫ এপ্রিল, ২০২১: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসায় নজরদারি না থাকার কারণে সেখানে একদিকে যেমন ছাত্রছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতনসহ অন্য নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রতিষ্ঠিত এইসব প্রতিষ্ঠানে কী পড়ানো হচ্ছে, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হচ্ছে কিনা, সরকারি দিবসগুলো পালিত হচ্ছে কিনা এবং সর্বোপরি এখানে পড়াশোনা করে ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যাচ্ছে, এসব নিয়েও জাতীয় পর্যায়ে তেমন কোন আলোচনা হচ্ছেনা। আজ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে।
”শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধে করণীয়” শীর্ষক এই ওয়েবিনারে বক্তাদের আলোচনায় আরো উঠে আসে যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীনে না থাকার কারণে কওমী মাদ্রাসায় ঠিক কী হচ্ছে এবং কিভাবে এখানে নিপীড়ণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব, তা স্পষ্ট নয়। কওমী মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ণসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা এতদিন ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও এখন সেইসব ঘটনা ক্রমশ সবার সামনে চলে আসছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই তিন মাসে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ জন ছাত্রছাত্রী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এছাড়া শুধুমাত্র মাদ্রাসা ও সেইফ হোমে ২১ জন শিশু এই তিন মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। উল্লেখ এই সময়কালে স্কুলগুলো বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসাগুলো খোলা ছিল। উপস্থাপিত তথ্য উপাত্তগুলো নেয়া হয়েছে ৯টি জাতীয় দৈনিক থেকে।
আজকের আলোচনায় অংশ নেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ আউয়াল হাওলাদার, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রফেসার রিয়াদ চৌধুরী এবং এসোসিয়েটে প্রফেসার কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, সহকারী পরিচালক মোশরাকুল আলম ডিপিই, রস্ক প্রজেক্ট এবং ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের রোকসানা সুলতানা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। প্রতিবেদনটি উপস্থাপণ করেন এমজেএফ এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর অর্পিতা দাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শাহীন আনাম বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিষয়টি জবাবদিহিতার সংস্কৃতির আওতায় আনতে হবে। বাবা মা বিশ্বাস করে তাদের শিশুকে শিক্ষাঙ্গনে পাঠান, সেখানে যদি এইভাবে নিপীড়ণের শিকার হয়, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম এ আউয়াল হাওলাদার বলেন, “ নিপীড়ণ বন্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে কী হচ্ছে এবং কী হতে পারে। আমাদের মন-মানসিকতা ও নৈতিকতার পরিবর্তন ঘটানোটা খুব জরুরি।” প্রফেসার রিয়াদ চৌধুরি বলেন,” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়ণ ও নির্যাতন বন্ধে একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং এধরণের অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
এসোসিয়েট প্রফেসার কামাল উদ্দীন বলেন,””আমাদের সচেতন হতে হবে এ ব্যাপারে যেন কেউ চাইলেই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে না পারে। দরিদ্র ঘরের অনেক শিশু কওমী মাদ্রাসায় থাকা খাওয়ার সুবিধা পায় বলে এখানে পড়তে আসে, কাজেই তাদের উপর নির্যাতন করাটা সহজ। এদের বলার মতো কোন জায়গা থাকেনা। এ দিকটায় আমাদের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।”
ড. শাহনাজ হুদা বলেন,” শুধু মাদ্রাসাতেই নয় ২০২০ সালে ৭০০ ক্যাথলিক ধর্মগুরু এবং থাইল্যান্ডে মংকদের বিরুদ্ধের যৌন হয়রানির অভিযোগ এসেছে। ধর্মীয় কর্তৃপক্ষেরই উচিৎ হবে এখন তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের জবাব দেয়া। নয়তো তাদের প্রতি মানুষের ধারণার পরিবর্তন ঘটবে। মাদ্রসার ছাত্ররা যেন অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, এজন্য একটি কমিটি থাকা উচিৎ।”
আইন সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবি আব্দুস রশীদ বলেন,”নারী ও শিশু নির্যাতন দমণ আইনে ছেলেশিশুর প্রতি যৌন হয়রানি ও বলাৎকার প্রসঙ্গে কোন স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়নি বলে আইনজীবি, পুলিশের কাছেও এটা পরিস্কার নয়।”আর রোকসানা সুলতানা বলেন, “বিশ্বাস ও ভয় থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুরা যৌন নির্যাতনসহ অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।”
এমজেএফ এর সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা এই ওয়েবিনারে অংশ নেন ও বিভিন্ন সুপারিশ পেশ করেন। #
শাহানা হুদা রঞ্জনা
সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর
এমজেএফ
০১৭১১৮৪৬৪৮০
Leave a Reply